রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
গণঅভুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন শিক্ষার্থীরা। এখন তারা দেশ মেরামতের কাজ করছেন তরুণরা। তাদের হাতেই নতুন করে গড়ে উঠছে নতুন বাংলাদেশ। দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিপ্লবের মুষ্টি ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছেন রং-তুলি, বাদ যাচ্ছে না ঝালকাঠিতেও। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গুম-আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও হল-ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবিতে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঝালকাঠির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরের অগোছালো দেয়ালগুলো নতুন করে সাজাচ্ছেন।
শনিবার বিকেল ৩টায় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার থানার সামনে ও পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এলাকায় রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা স্বস্ব উদ্যোগে স্বেচ্ছাচারিতায় অংশ নেয়। কলম ধরা হাতে রং তুলির আলপনায় প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাজাপুরের ভালোবাসার রাজাপুর ফেসবুক গ্রুপের এডমিন প্যানেলের অর্থায়নে রং তুলি কিনে তারা গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের এক হাতে রংয়ের কৌটা, অন্য হাতে তুলি। শরীর বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবু চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস তাদের।
দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নিল, হলুদসহ নানা রঙে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি। তাদের সাহায্য করছেন অন্য শিক্ষার্থীরা, কেউ বসে নেই। শিক্ষার্থীদের এমন নান্দনিক কাজে চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োঃবৃদ্ধদের।
বিভিন্ন রংয়ের মিশ্রণে দেয়ালে ফুটে উঠেছে প্রতীকী প্রতিবাদী বাক্যে- বল বীর চির উন্নত মম শির, কারারঐ লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল, মেধার বিজয় নতুন দেশ গড়ি, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, ছাত্র সমাজ, বুকের ভেতর দারুণ ঝড় বুক পেতেছি গুলি কর, কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী, সংঘাত নয় সম্প্রতির বাংলাদেশ চাই, রাজনৈতিক ধর্মীয় জাতিগত সহিংসতা পরিহার করুন শান্তি সম্প্রতির বাংলাদেশ গড়ি, রেমিট্যান্স যোদ্ধা আমরা তোমাদের ভুলবো নাসহ নানা লেখা।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সবাই যেন ধর্মীয় দিক থেকে উগ্রমানসিকতা বাদ দেয়। যার যার ধর্ম, তাকে তার ধর্মের অধিকার নিয়ে বাঁচতে দেওয়া হোক। কোনো ধর্মের মানুষ যেন তার ধর্ম পালনে বাধাগ্রস্থ বা বিপদগ্রস্ত না হয়। এ রকম বিষয়গুলো আমরা ফুটিয়ে তুলেছি। আমি অনেক সন্তুষ্ট এ সব নিয়ে কাজ করতে পেরে। এ দেয়ালিকার মাধ্যমে যদি সবাই বিষয়টা বুঝতে পারে, তাতেই আমরা স্বার্থক।
দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচিতে দেয়াল লিখনে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবি ইসলাম বলেন, ‘সরকারপন্থীরা আমাদের মেরে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। আমরা এই লেখার মাধ্যমে বোঝাতে চাই, যতই মেরে ফেলা হোক আমাদের সাহস আরও দ্বিগুণ হবে।’ সে আরও জানায়, ‘১৮ জুলাই থেকে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, অনেককে প্রতিবন্ধী করা হয়েছে। নিহত আবু সাঈদের বোনের ভাষাসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী ভাষাকে আমরা দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিতে তুলে ধরছি।’
রাজাপুর সরকারি কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আরজু বলেন, ‘আমরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দেখিনি; একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যা দেখিনি। কিন্তু এগুলো সব সময় আমাদের প্রতিবাদী চেতনার জন্ম দেয়। এবার আমরাও ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। আমরা রক্তাক্ত জুলাই দেখেছি, চব্বিশ (২০২৪) দেখেছি। দেয়ালে, সড়কে গ্রাফিতির মাধ্যমে চব্বিশকে পৃথিবীব্যাপী জানিয়ে দিতে চাই। এটিও আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।’
ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ৩য় ট্রাইমেস্টারের শিক্ষার্থী নুজহাত তাবাসসুম বলেন, স্বাধীন ও রঙিন দেশ এই বাংলাদেশ। সেই রঙ ফিরিয়ে দিতেই গ্রাফিতি করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে আমরা আন্দোলন করে যে অর্জনটা করেছি, সেটা দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছি। সবাই যেন স্মৃতিগুলো মনে রাখে, সে জন্য এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।